* বাংলাদেশ-ইতালি বাণিজ্য ফোরাম গঠনের প্রস্তাব
* পোশাক খাতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করতে চায় কসোভো
* রাজনৈতিক দলগুলো শিগগির জুলাই সনদ সই করবে
* বিচারের মুখোমুখি হয়েও হাসিনা উসকানিমূলক মন্তব্য করছেন
* নিউইয়র্কে ভারতের তীব্র সমালোচনা প্রধান উপদেষ্টার
* গাজায় শান্তি রক্ষায় অবদান রাখতে চায় বাংলাদেশ
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে ইতালির বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি ইতালি-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন তিনি। এছাড়াও দেশের রাজনৈতিক দলগুলো শিগগির সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের মূল বিষয়সমূহ নিয়ে একটি জুলাই সনদ সই করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গত বুধবার নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ এক্সিকিউটিভ বিজনেস গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করার আহ্বান করেন। অ্যাডভান্সিং রিফর্ম, রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড গ্রোথ শীর্ষক-এ আলোচনার আয়োজন করে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল (ইউএসবিবিসি)। অনুষ্ঠানে মেটলাইফ, শেভরন এবং এক্সেলেরেটসহ শীর্ষ মার্কিন কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। প্রেস সচিব শফিকুল আলম পরে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসা বাংলাদেশের ছয় জন রাজনৈতিক নেতা সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের মার্কিন শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
অপরদিকে কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভজোসা ওসমানী প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। গত বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বৈঠক করেন তারা। নিউইয়র্ক সিটির একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে অভিবাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পারস্পারিক বিনিময়সহ দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। প্রেসিডেন্ট ওসমানী কসোভোকে দ্রুত ও অব্যাহত সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশটিকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। কসোভোর সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশটি টানা দ্বিতীয় বছরের জন্য এই অঞ্চলে সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করেছে। গণহত্যার পর কসোভো সফলভাবে তার অর্থনীতি পুনর্গঠন করেছে এবং এখন নিরাপত্তা ও আইনের শাসনের দিক থেকে ইউরোপের সবচেয়ে নিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে স্থান পেয়েছে। ওসমানী উল্লেখ করেন, কসোভোতে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক কাজ করছেন, যারা দেশটির অর্থনীতিতে মূল্যবান অবদান রাখছেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করতে প্রেসিডেন্ট ওসমানী বাংলাদেশের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব করেন। সহযোগিতা ও পারস্পরিক স্বার্থের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বস্ত্র খাতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির সুপারিশ করেন।
প্রফেসর ইউনূস প্রেসিডেন্ট ওসমানীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং অর্থনৈতিক সুযোগ অনুসন্ধানে কসোভার বাণিজ্য প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় পাঠানোর জন্য উৎসাহিত করেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক জোরদারের জন্য নিয়মিত যুব বিনিময় কর্মসূচিকেও সমর্থন করেন। বৈঠকে উপস্থিত আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের চুক্তি নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করবে এবং উভয় দেশই লাভবান হবে। আসিফ নজরুল বলেন, কসোভোতে বাংলাদেশি কর্মীরা দেশের আতিথেয়তা ও উষ্ণতার কথা প্রায়ই বলে থাকেন। সভায় সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বাংলাদেশে ইতালির বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি ইতালি-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন। গত বুধবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কের একটি হোটেলে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
প্রফেসর ইউনূস এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকলেও বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা সম্প্রসারণের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, অভিবাসন চ্যালেঞ্জ, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট এবং ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মেলোনির সম্ভাব্য বাংলাদেশ সফরসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করেন। অভিবাসন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী মেলোনি নিরাপদ অভিবাসন পথ নিশ্চিত করতে ঢাকার সঙ্গে গঠনমূলকভাবে সম্পৃক্ত হতে ইতালির আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি মানবপাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন, যা ভূমধ্যসাগরে শত শত অভিবাসীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
জবাবে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে মানবপাচারের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। প্রফেসর ইউনূস বলেন, মানবপাচার রোধে আমাদের আরও বৈশ্বিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তর প্রসঙ্গে প্রফেসর ইউনূস বলেন, ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের পথে রয়েছে, এরপর তিনি তার আগের ভূমিকায় ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। প্রধানমন্ত্রী মেলোনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে গত ১৪ মাস ধরে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং তাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, ইতালি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সমর্থন করবে। চলমান রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও দুই নেতা মতবিনিময় করেন। প্রফেসর ইউনূস বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী মেলোনি আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন। বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও শান্তি রক্ষার পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ফিলিস্তিনের গাজায় শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা জাতিসংঘে তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গত বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বিষয়ে গ্লোবাল অ্যালায়েন্সের উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রীদের বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা অংশ নিয়ে তার বক্তব্যে পুনরব্যক্ত করেন।
উপদেষ্টা তার বিবৃতিতে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, অবাধ মানবিক প্রবেশাধিকার এবং যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে অনাহারকে প্রত্যাখ্যানের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা ও পুনর্গঠনের সুবিধার্থে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গাজায় আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা মিশনে বাংলাদেশের সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং শান্তিরক্ষা ক্ষেত্রে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অবদান রাখতে বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমান্তে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম এবং কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের অবিচল সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। বেশ কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিকেও স্বাগত জানান তিনি। এর আগে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জাতিসংঘ সদর দফতরে আফগানিস্তান বিষয়ক ওআইসি মিনিস্ট্রিয়াল কন্টাক্ট গ্রুপে যোগ দেন।
সেখানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তার বক্তব্যে আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের সংহতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও মানব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্মিলিত সম্পৃক্ততার আহ্বান জানান। তিনি আফগান নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) কাঠামোর আওতায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগে অবদান রাখতে বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
এছাড়া মো. তৌহিদ হোসেন নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক উপমন্ত্রী প্যাসকেল গ্রোটেনহুইসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। আলোচনায় গণতান্ত্রিক সংস্কার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ, অভিবাসন ও দক্ষতা উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জল ব্যবস্থাপনা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। উভয় পক্ষই বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে দীর্ঘদিনের অংশীদারত্বকে শক্তিশালী করার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেছে বলে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফাঁকে এক বৈঠকে ভারতের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, গত বছর গণবিপ্লবকে ভারত ভালোভাবে নেয়নি এ কারণে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক জোট সার্ককে পুনর্জ্জীবিত করার ব্যাপারেও জোর দিয়েছেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত সার্জিও গোরের সঙ্গে বৈঠকে ভারত সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। সার্জিও গোরকে একমাস আগে ভারতের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন এ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে ভারত নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ছাত্ররা গত বছর যা করেছে সেটি ভারত পছন্দ করেনি। এ কারণে ভারতের সঙ্গে আমাদের সমস্যা রয়েছে। ভারতীয় মিডিয়াগুলোর ভুয়া খবর পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। ভারত থেকে অনেক ভুয়া খবর আসছে। তারা প্রোপাগাণ্ডা ছড়িয়েছে গত বছরের গণবিপ্লব ছিল একটি ইসলামি আন্দোলন। এছাড়া সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেছেন, ভারত হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। যিনি সমস্যার সৃষ্টি করছে। এগুলো ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করেছে। এছাড়া ভারতের কারণেও সার্ক জোটকে পুনর্জ্জীবিত করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সার্ক কাজ করছে না কারণ একটি দেশের রাজনীতির সঙ্গে এটি ফিট হচ্ছে না। এছাড়া এশিয়ার আরেক জোট আসিয়ানে যোগ দেওয়ার আগ্রহও দেখিয়েছেন তিনি।
সর্বশেষ ২০১৪ সালে সার্কের সম্মেলন হয়। এর পরের সম্মেলনটি ২০১৬ সালে হওয়ার কথা ছিল। তবে উরিতে সন্ত্রাসী হামলার জেরে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে যেতে অপরাগতা প্রকাশ করে ভারত। এরপর এ জোটটি বলতে গেলে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। ভারত যদিও এখন সার্কের সদস্য। কিন্তু তারা পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে তৈরি বিমসটেককে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এমনকি ভারত তাদের বিভিন্ন বিষয় বিমসটেকের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জানিয়ে থাকে। সর্বশেষ বিমসটেক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠক করেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের মান অনুযায়ী বিচার চলছে। বিচারের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তিনি (শেখ হাসিনা) উসকানিমূলক এবং অস্থিতিশীল মন্তব্য অব্যাহত রেখেছেন। ড. ইউনূস আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ন্যায়বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছে। গত বুধবার ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার স্টাব নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকালে দুই নেতা বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, জাতিসংঘ সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আসিয়ানে বাংলাদেশের যোগদানের প্রচেষ্টা, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার এবং নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ-প্রাপ্তির প্রচেষ্টাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। প্রফেসর ইউনূস গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তাদের অব্যাহত সমর্থনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, গত ১৪ মাসে আমাদের সরকারের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন অপ্রতিরোধ্য। তিনি ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, দেশের ১২ কোটি ৬০ লাখ ভোটারকে শান্তিপূর্ণভাবে এবং উৎসবের পরিবেশে তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের জনগণ গত ১৫ বছর ধরে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন থেকে বঞ্চিত। এখন তারা অধীর আগ্রহে ফেব্রুয়ারির অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রফেসর ইউনূস প্রেসিডেন্ট স্টাবকে বলেন, বাংলাদেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার চলছে। তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে সই করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা গভীর রাজনৈতিক সংস্কারের একটি কাঠামো রাষ্ট্রপতি স্টাব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্রনীতির দিকনির্দেশনা সম্পর্কেও খোঁজখবর নেন। জবাবে প্রফেসর ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে কাজ করছে এবং সক্রিয়ভাবে আসিয়ানের সদস্যপদ পাওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে সার্ক ও আসিয়ানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন হিসেবে দেখছি। আসিয়ানের সঙ্গে সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনারশিপের জন্য আমাদের আবেদন চূড়ান্ত পূর্ণ সদস্যপদের দিকে একটি পদক্ষেপ। ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বিশ্বব্যাপী কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘের সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। প্রেসিডেন্ট স্টাব বলেন, বিশ্ব ব্যবস্থা পাল্টে যাচ্ছে। আমাদের অবশ্যই জাতিসংঘকে শক্তিশালী করতে হবে। একমত হয়ে প্রফেসর ইউনূস বলেন, বড় ধরনের বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘ অনেকাংশে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা বাড়ছে এবং জাতিসংঘ মূলত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অর্থবহভাবে প্রভাব ফেলার ক্ষমতা হারিয়েছে। দুই নেতা দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সংকট এবং বর্তমানে বাংলাদেশের আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল বৃদ্ধির গুরুত্বের বিষয়টিও তুলে ধরেন। তারা আঞ্চলিক যোগাযোগ বিশেষ করে স্থলবেষ্টিত নেপাল ও ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশের সুযোগ দিতে বাংলাদেশের কৌশলগত ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। প্রফেসর ইউনূস বলেন, এই উদ্যোগ এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উল্লেখযোগ্যভাবে ত্বরান্বিত করবে। বৈঠকে জ্বালানি উপদেষ্টা ফৌজুল কবির খান ও এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন।
তবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো শিগগির সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের মূল বিষয়সমূহ নিয়ে একটি ‘জুলাই সনদ’ সই করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে আরেকজন স্বৈরশাসকের উত্থান রোধ করাই সংস্কারগুলোর লক্ষ্য। গত বুধবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ কথা বলেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বৈঠকের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, বৈঠকে দুই নেতা নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এর মধ্যে ছিল বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কারমূলক পদক্ষেপ, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যা, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়গুলো।
প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানে সাম্প্রতিক বন্যায় এক হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানিতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানান। এসময় শেহবাজ শরিফ এ ধরনের দুর্যোগের ঘন ঘন ও তীব্র হওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন।
বৈঠকে ড. ইউনূস জানান, বাংলাদেশ আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পথে রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন ১১টি জাতীয় কমিশনের প্রস্তাবিত বড় ধরনের রাজনৈতিক সংস্কার বাংলাদেশে অর্থবহ রাজনৈতিক রূপান্তরের পথ সুগম করবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায় চলছে এবং দলগুলো শিগগির সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের মূল বিষয়সমূহ নিয়ে একটি ‘জুলাই সনদ’ সই করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সার্ক কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের বিকল্প পথ নিয়েও দুই নেতা আলোচনা করেন। বৈঠকে শেহবাজ শরিফ অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ড. ইউনূসকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান। বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ এক্সিকিউটিভ বিজনেস গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা
মার্কিন কোম্পানিকে বিনিয়োগের আহ্বান
- আপলোড সময় : ২৬-০৯-২০২৫ ০৪:৩৭:০১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৬-০৯-২০২৫ ০৪:৩৭:০১ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ